আমাদের বুধবার প্রতিবেদন
দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। শিল্প–কারখানায় সময়মতো গ্যাস–বিদ্যুৎ এবং ব্যাংক–ঋণ মেলে না। আবার ঋণ পেলেও গুনতে হয় চড়া সুদ ও অহেতুক চার্জ। এর পরও ভয় ও আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া নীতিমালায় অল্পতেই ব্যবসায়ীদের নাম ঋণখেলাপির তালিকায় উঠে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সুদের হার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। বিশ্ববাজার ভালো না থাকায় প্রত্যাশিত রফতানিও হচ্ছে না। দেশীয় বাজারেও দীর্ঘদিন ধরে চলছে মন্দাভাব। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের জন্য গত বছর জুনে আরেক বিপদ, ব্যাংক–ঋণ নীতিমালা নিয়ে হাজির হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দুটি ‘মাস্টার সার্কুলার’–এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশনিং ও পুনঃতফসিলসংক্রান্ত নতুন যে নিয়ম করে তাতে ব্যবসায়ীরা আরও দ্রুত এবং অল্পতেই ঋণখেলাপি হচ্ছেন। এর আগে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তা প্রথম পর্যায়ে শ্রেণীকৃত হওয়ার সময় ছিল ছয় মাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতে সংস্কারের কথা বলে এই সময় কমিয়ে তিন মাস করে। এ ছাড়া শ্রেণীকরণের পরবর্তী প্রতিটি পর্যায়েই ছয় থেকে নয় মাস করে সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। গেল ডিসেম্বর প্রান্তিক থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হয়। নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরুর পর পরই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করে। হঠাৎ করে সময় কমিয়ে আনায় নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা।
অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নতুন ইউনিট সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও স্থগিত করে দিয়েছেন। এতে বিনিয়োগসহ শিল্পায়ন নিয়ে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে চলেছে। শিল্পায়ন ছাড়া সরকারের ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন চাপের মধ্যেও যারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করছেন, তাদের অনেকেই একদিকে যেমন বেশি সুদ গুনছেন, অন্যদিকে ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা কমিয়ে ফেলায় অল্পতেই খেলাপি হচ্ছেন। গ্যাস–বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সরকারি সুযোগ–সুবিধার অভাবেও উৎপাদনে যেতে পারছে না শিল্প–কারখানাগুলো। বিনিয়োগ ঝুলে থাকায় সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় প্যানেল সুদসহ অন্যান্য চার্জ দিতে হচ্ছে তাদের। এভাবে কোনো দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারে না। ব্যাংকিং খাতের এ জগাখিচুড়ি মার্কা অবস্থা দেখেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীরবতা বোধগম্য নয়। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত সাড়ে চার বছরে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নতুন শিল্প গড়ে তুলেছেন বা পুরনো প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করেছেন। এমন অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন তাদের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি গ্র“প অব কোম্পানির মালিক, ব্যবসায়ী নেতা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাড়ে চার বছরে তার ব্যবসা ৬০ শতাংশ সম্প্রসারণ করেছেন। এ সময়ে তার কোম্পানিটি প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। কিন্তু ব্যাংক–ঋণসংক্রান্ত জটিলতা, শিল্প–কারখানা স্থাপন ও সম্প্রসারণে আমলাতান্ত্রিক ভোগান্তিতে তিনি এখন বিপাকে পড়েছেন। তার মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি নতুন শিল্প–কারখানা স্থাপন বা পুরনোটি সম্প্রসারণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিতে হয়। তারা যখন দুই বছর আগে শিল্প–কারখানা স্থাপন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন, তখন সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু যখন তাদের সংযোগ দরকার ছিল, তখন সরকার দিতে পারেনি। ফলে তারা ব্যাংক–ঋণ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে চার বছর আগে ব্যাংক–ঋণের সুদ ছিল ১১–১২ শতাংশ এখন তা চার্জসহ দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে প্রায় ২০ শতাংশে। ফলে তারা এতদিন যেমন শিল্প–কারখানা চালু করতে পারেননি, তেমনি আবার ব্যাংক–ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সব ব্যবসায়ীই কম–বেশি নাস্তানাবুদ হয়েছেন। এর সঙ্গে নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে গত বছর জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া নীতিমালা। এর ফলে অল্পতেই ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা এখন তাদের শিল্প–কারখানা নিয়ে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় আছেন ব্যাংক–ঋণ নিয়ে। এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে একজন মাঝারি পর্যায়ের শিল্পমালিক বলেন, শিল্পের চাকা ঘুরুক আর নাই ঘুরুক ব্যাংক–ঋণের সুদের চাকা ঠিকই ঘোরে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ঋণ পরিশোধ করতে পারলে তিনি ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ২০১১ শেষে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে বিপুল এই অর্থ খেলাপি হওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা ও মাত্রাতিরিক্ত সুদের হারসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের ওপর সুদসহ অন্যান্য চার্জ আরোপকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে বেশি করে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মুনাফার একটি বড় অংশ আটকা পড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর কাছে। এতে ব্যাংকের শেয়ার গ্রহীতাদের লভ্যাংশের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংককে প্রভিশন ঘাটতিতেও পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া সুদের হার বেশি থাকায় ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে আগ্রহ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। যারা সাহস করে ঋণ নিচ্ছেন তাদের অনেকেই আবার গ্যাস–বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে শিল্প–কারখানা চালু করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্যের স্বার্থে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা শিথিল করা ও ঋণের সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হরতালের পর যেসব ব্যবসায়ী দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে তাদের পণ্য ঢাকায় আনতে বা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাঠাতে চেয়েছেন তারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন রাস্তার অবস্থা দেখে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটারব্যাপী যানজটের কারণে পণ্যবাহী ট্রাকের অনেকগুলোই গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। অনেক রফতানিকারক ক্রেতাদের চাপে এয়ার কার্গোর মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে পণ্য রফতানি করছেন। ব্যবসায়ীদের হিসেবে হরতালের কারণে দেশের প্রধান খাতগুলো দৈনিক ১ হাজার ৬শ‘ কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বছর শেষে দেশের মোট জাতীয় উত্পাদন বা জিডিপির ক্ষতি হবে প্রায় সাড়ে ছয় ভাগ। তাদের আশঙ্কা বছরে এই ক্ষতি ৬৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস না হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে যেমন কাঁচামাল রয়েছে তেমনি বিভিন্ন কারখানার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশও রয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে না পারার কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দৈনিক সর্বোচ্চ ৬শ‘ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে দেশের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা এবং শপিং মলগুলোর। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফেরাতে শুরু করেছে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ দৈনিক ৩৬০ কোটি টাকা। আর অন্যান্য শিল্প–উৎপাদনে দৈনিক ক্ষতি শতকোটি টাকার বেশি।
ব্যবসা–বাণিজ্যের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে। অর্থ বছরের প্রথম আটমাসে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৩১ ভাগ। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আইএমএফ ও এডিবি। তারা ইতিমধ্যে সে কথা জানিয়েও দিয়েছে। অপরদিকে, সমুদ্রপথে যেসব পণ্য ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পৌঁছানোর কথা ছিল, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেসব পণ্যের বেশিরভাই জাহাজ ধরতে পারেনি। বাধ্য হয়ে এসব পণ্য এখন আকাশ পথে পাঠাতে হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এর সিংহভাগই তৈরি পোশাক। রফতানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০ গুন বেশি ভাড়া দিয়ে আকাশ পথে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অনেক কারখানায় তৈরি পোশাকের স্তূপ জমা হয়ে আছে। সময়মতো রফতানি করতে না পারার কারণে অনেকের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ বিষয়ে নিটওয়্যার রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ–র সহ–সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রতিদিনই কারো না কারো পণ্য এয়ার শিপমেন্ট হচ্ছে। অনেকে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে অর্ডার বাতিল হচ্ছে। অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্টও দাবি করছেন। তিনি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবহনসহ অন্যান্য সেবাকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলার প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে, গত একমাসের ব্যবধানে পরিবহন খরচ ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন গোডাউনে আমদানি পণ্যের স্তূপ পড়ে আছে। উচ্চসুদে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমদানি করা এসব পণ্যের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লোকসান গুনছেন। এই বাজারে প্রতিদিন নয়শ থেকে এগারশ কোটি টাকার পণ্য বেচাকেনা হয়ে থাকে। গত কয়েকদিন পরিবহনের অভাবে তা দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, সার্কুলার জারির পর আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা কিছুটা নমনীয় করা হয়। কিন্তু তাতেও ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ হচ্ছে না। এ অবস্থায় শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এফবিসিসিআই আবার অনুরোধ জানাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রচলিত নীতিমালা অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বড় বড় সব ব্যবসা–প্রতিষ্ঠানই ব্যাংক–ঋণের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। আমদানি–রফতানি বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংক–ঋণের বিকল্প নেই। এতদিন আগের ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিগত বছরগুলোতে দেশে অনেক শিল্প–কারখানা স্থাপিত হয়েছে। নতুন করে আরোপ করা কঠোর এ নীতিমালার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ব্যবসা করতে বড় ধরণের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ঋণ শ্রেণীকরণ ও পুনঃতফসিলিকরণের আন্তর্জাতিক মানের এ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের আর্থিক কাঠামো সুসংহত হবে এমন আশা করেই এ নির্দেশনা জারি করে আলাদা দুটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। প্রথম থেকেই এ নীতিমালার বিরোধিতা করে আসছিলেন ব্যাংক ও ব্যবসায়ী নেতারা।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতের ঋণের ক্ষেত্রে ১৭–২১ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে লিজিং কোম্পানিগুলোকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাশের অনেক দেশেই সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে হওয়ায় তাদের কস্ট অব ফান্ড কম। ফলে তাদের পণ্য স্বল্পমূল্যে দেশের বাজারে ঢুকে যাচ্ছে। এতে দেশীয় শিল্প মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। আর দেশীয় বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, তাদের পক্ষে এত বেশি সুদ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। সার্বিকভাবে ঋণের সুদের প্রভাব পড়ছে দেশের বিনিয়োগে। প্যানেল ইন্টারেস্ট ও অন্যান্য চার্জসহ ২০–২২ শতাংশ চলে আসে ব্যাংকলোতেও। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের হার বেড়ে গেলে ঋণ বিতরণও কিছুটা কমে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিনিয়োগে। ব্যবসায়ীরা খেলাপি হয়ে পড়ায় ব্যাংকগুলোও নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে ব্যাংকগুলোর মুনাফায়। বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিমাণও কমে যায়। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঋণপ্রবাহ কমানোর জন্য সুদহার বাড়িয়ে দেওয়ার একটা কৌশল প্রয়োগ করার রীতি আছে। তবে তা সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। ঋণ সংকোচন করলে অর্থনীতির গতি কমে যায়, সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হারও কমে আসে এবং এর প্রভাব পড়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে।।